আজকাল ছেলেমেয়েরা পছন্দ কেরে বিয়ে করেবে তাতে আপত্তি নেই হেদায়েত উল্লার । তিনি একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী রাজনীতিবিদ ও বটে। সমাজে বেশ নাম ডাক তার । তার একমাত্র মেয়ে উচ্চশিক্ষতা হবে সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাভাষার প্রতি তার বেশ দরদ। প্রতিটি অনুষ্ঠানে তিনি কবিতার দু চার লাইন শুনিয়ে থাকেন স্রোতাদের। অতিথিরা ও তার আবৃতি বেশ উপভোগও করেন। ভাষা আন্দলনে তাদের নাকি বেশ অবদান ও ছিলো । তারই এক বন্ধু কেরামত আলী। এলাকায় বেশ খ্যাতি আছে দান খয়রাতের জন্য । দুই বন্ধুর ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশ সখ্যতা, আলাপ থেকে প্রেম। হেদায়েত উল্লাহ্র দেশপ্রেম অনেক । কথায় কথায় কেঁদে ফেলেন । মেয়েকে বিলেত থেকে পড়াশুনা করিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। তাকে একটি বড় এন জি ও এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক করে রেখেছেন। নাম নন্দিতা, নারী পুরুষের বৈসম্য নিয়ে কাজ করে । নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা তার কাজ। আর বাবা দেশে মানুষের মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। আর আমি হলাম জনাব কেরামত আলীর একমাত্র কথিত আদর্শ ছেলে, আমাকে হিমেল নামেই সবাই চেনে। নন্দিতা আর আমার মাঝে চলছে গভীর প্রেম। দুজনেই উচ্চ শিক্ষিত। আধুনিক সমাজে বেড়ে উঠা। আমাদের বাবারা গর্ব করে বলেন তাদের ছেলে মেয়েরা তাদের প্রতিনিধিত্ব করবো সামনে। আমরাই হবো একসময়ের কর্ণধার । যাই হোক আসলেই তো আমাদেরকে সামনের দিনে হাল ধরতে হবে। আজ নন্দিতার সাথে বসেছি বেশ কিছু গুরুত্ব পূর্ণ আলোচনা করার জন্যে। আমি শুরু করলাম -আচ্ছা নন্দিতা আমাদেরতো অনেক দিন হলো প্রেম এখন বিয়ে করা দরকার আর বাবা বলছিল তার এক বন্ধুর মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে ওর সাথে আমাকে বিয়ে দিবে। তুমি কি বল ? -তুমি কি বলো মানে কী ? হট ডু ইউ মীন বাই তুমি কি বলো ? ইউ ডু নট লাইক টু ম্যারি মি ? টেল মি ক্লিয়ারলী? -নন্দিতা রাগ করছো কেন ? আমি কি তাই বলেছি ! আমি বলছিলাম বাবা তার বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা ভাবছে । আমি তো বলিনি আমি তাকেই বিয়ে করছি । - হট আই গেজ ইট ইজ রাইট । আই নো ইউ গাইজ, ইউ ডোন্ট লাভ মি । -নন্দিতা তুমি একটু বেশিই বলছো । নন্দিতার কথা শুনে বুঝতেই পারছেন সে সবসময় ইংরেজিতেই কথা বলে । কারণ সে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশুনা করেছে দেশ বিদেশ থেকে । আমি যখন ওর বাসায় যাই তখন ওর বাবা আর ও ইংরেজিতেই কথা বলে । নন্দিতা বাবার স্বপ্ন সব যায়গায় বাংলার চর্চা করা । আজ বেশ উত্তপ্ত তাই আর না বাড়িয়ে ওকে কোন মতে ম্যানেজ করে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে কফি খেতে খেতে শেষমেশ একটি শব্দ বলাতে পেরেছিল –আমি তোমাকে লাভ করি। তাও বাংলিশ। প্রেম চলছে আমাদের । আড্ডা চলছে । এবার ওর বাবার কাছে থেকে প্রেসার নন্দিতাকে বিয়ে করতে হবে। ছেলে আমেরিকায় প্রতিষ্টিত । নন্দিতা আমাকে ভালোবাসে তাই সে আমাকেই বিয়ে করবে। ওর বাবার সাথে ওর বেশ ঝগড়া । কেন সে আমাকে বিয়ে করবে? আমার কি কি যোগ্যতা আছে ওকে বিয়ে করার। আমি দেশে পড়াশোনা করেছি বাংলা মাধ্যমে। যাই হোক আমার বাবার ইচ্ছা আমি তার বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করি কারণ আমি অস্ট্রেলিয়াইয়ার সিটিজেনশিপ পাব, বেশ অর্থ কড়ি হবে। মেয়ের বাবার অনেক টাকা । সেও দেশ থেকে বেশ পাচার করে ওখানে এখন অর্থের পাহাড় গড়েছেন সেও একসময় বেশ দেশপ্রেমিক ছিলেন । আমি ওদের চিনতে চাই । বুঝতে চাই । কিন্তু একটা চিনতে পারলে আরেকটা তো সম্ভব না । যাই হোক ঠান্ডা মাথায় আমাকে আগাতে হবে। নন্দিতা আমাকে ফোনে - হিমেল হোয়ার আর ইউ ? -আমি বাসায় , কেন ? - আই নীড ইউ আরজেন্টলি,আই নীড টক টু ইউ । -আচ্ছা আমি কোথায় আসবো ? -কাম টু হোম, আই এম এলোন। -নন্দিতা তুমি একা ! -ইয়েস, সো হট ? -না এমনি, ধন্যবাদ আসছি । -কাম কুইকলী, আই’ম ওয়েটিং ফর ইউ ডিয়ার। -আচ্ছা আসছি লক্ষ্মী । আমি একটি সিএন জি নিয়ে ওর বাসায় হাজির । ওর বাবা সহ বাসার সবাই উপস্থিত । আমি তো হতবাক । ও বলল বাসায় কেউ নেই কিন্তু বাসা ভর্তি লোক। সবাই নন্দিতার বিয়ে পাকা কথা বলছিল কিন্তু ওর মত মিলচিলনা তাই আমাকে ও ডেকেছে। ওর বাবা আমাকে -আচ্ছা হিমেল তুমি কেন আমার মেয়ের পিছু নিয়েছ ? -আঙ্কেল এ কি বলছেন ? আমি কেন পিছু নিব। আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি। -ইয়েস পাপ্পা, আই লাভ হিম । জাস্ট সাট আপ, এই বলে নন্দিতার বাবা ওকে থামিয়ে দিল। আমিও চুপ হবে বসে রইলাম । বল তোমার কি আছে যা তুমি আমার মেয়েকে দিবে ? তোমার বাবার কি আছে আমি জানি । ও আমার বন্ধু না হলে আমি তোমাকে এখান থেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম। - আঙ্কেল আমার অপরাধ? -তুমি জাননা তুমি আমার বন্ধুর ছেলে হয়ে তুমি কিভাবে ভাবলে নন্দিতাকে বউ করার ? -আমি কিছুই ভাবিনি। যা ভাবছেন সব আপনারা । নন্দিতা আমি তোমাকে ভালোবেসে ভুল করেছি ? তুমিই বল? -আই ডোন্ট নো বাট ইউ টেল মি হাউ মাচ মানি ডু ইউ হ্যাভ ইন ইউর একান্ড দ্যাট ইউ ক্যান গিভ মি। -বাহ ! নন্দিতা বাহ ! এই না সমাজকল্যাণ কর্মীর কথা। তুমি না বলতে প্রেমের চেয়ে বড় কিছু নাই । -ওসব পদ্য বাদ দেও হিমেল, বল তুমি নন্দিতাকে বিয়ে করে কি দিবে? তোমার ব্যাংক ব্যালেন্স কতো ? নন্দিতার বাবার এই কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছে ওদের এই সমাজকে ভেঙ্গে তছনছ করে দেই । যেকিনা বাংলার জন্য গ্লিসারিন দিয়ে কাঁদে আর তার মেয়ে ইংরেজি ছাড়া কথাই বলেনা । তার মেয়ে সমান অধিকারের কথা বলে সে পাত্রের অর্থের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । আচ্ছা নন্দিতা তুমি তো নারী পুরুষের সমান অধিরকার নিয়ে কাজ কর তাই ? -ইয়েস,এনি ডাউট। আমার জানতে ইচ্ছে করে তোমার বিয়ের পর তুমি তোমার স্বামীকে কি কি দিবে ? আমি আগেই ভাবছিলাম এই ছেলেটা লোভী তা না হলে কেউ কি একথা বলে? নন্দিতার বাবা সবার উদ্দেশ্যে বলছে। -আঙ্কেল আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। আমি কত টাকা আপনার মেয়ের নামে লিখে দিব তা নিয়ে আপনি চিন্তিত তো আমার বাবা আপনার বন্ধু ও তো ভাবে তার ছেলে কতো টাকা পাবে , আপনারা তো একই গোয়ালের গরু । তাই নন কি ? কী তুমি আমাকে গরু বললে । দেখলে এদেশের ছেলেদের কালচার । বাংলায় পড়াশুনা শিখলে যা হয়। -না আঙ্কেল গরু বললে কমই হবে। -বেয়াদব ছেলে বেড়িয়ে যাও । আঙ্কেল যাব, থাকতে আসিনি। আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে আপনাদের মত দেশপ্রেমিক ভণ্ডরা এই সমাজ থেকে কবে শেষ হবে। নন্দিতা তুমি আধুনিক মেয়ে তুমি নারী পুরুষের সমান অধিকার চাও অথচ তুমিই কিনা আমার অর্থের উপর ভর করে জীবন চালাতে চাও । কি লাভ বিদেশে পড়াশুনা করে। আমার বাবা একজন দানবীর খেতাব নিয়ে ঘুরেবেড়ায় সেও চাচ্ছে আমাকে অন্য মেয়ের কাছে দিয়ে অর্থ আদায় করতে। আমি আপনাদের এই সমাজকে ঘৃণা করি। আমি দুবেল দুমুঠো খেয়ে এই বাংলায় বেঁচে থাকতে চাই। আমার দরাকার নেই আপনার মেয়ের মত বাংলিশ মেয়ে, চাইনা অস্ট্রেলিয়ায় সেটেল্ট হতে । ভালো থেকো নন্দিতা । -হিমেল আমি তোমার সাথে যাব। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি বাংলাতেই কথা বলবো। আমি যা আয় করবো আর তুমি যা আয় করবে তা দিয়ে আমাদের সংসার দিব্বি চলে যাবে...।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মালেক জোমাদ্দার
সকল বন্ধুদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।